জবি শিক্ষার্থী খাদিজাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান এমনেস্টির
২৯ অগাস্ট ২০২৩, ২১:৪০ পিএম
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
খাদিজাতুল কুবরাকে নির্বিচারে কারাবন্দি রাখার এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া উপলক্ষ্যে সংস্থাটি এই বিবৃতি প্রদান করে।
সোমবার অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন উপ-আঞ্চলিক পরিচালক নাদিয়া রহমান বলেন, খাদিজাকে এক বছর ধরে কারাবন্দী করা এবং বারবার জামিন না দেয়া বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিহাস ও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে, ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করতে হবে এবং নিজ ভাগ্য নির্ধারণের জন্য কঠোর আইনের অধীনে তাকে কারাগারে রাখা উচিৎ নয়। একটি কঠোর আইনের অধীনে তাকে জেলে ঠেলে দেয়া তার ভবিষ্যত অন্ধকারে ঢেকে দেবে।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, খাদিজাতুল কুবরার এই আটকাবস্থা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের কথা বলার সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের জন্য খারাপ নজির তৈরি হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে খাদিজাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে যারা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে মতাপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের চর্চার জন্য এভাবে বন্দী আছেন, তাদেরও মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
পাশাপাশি মুক্তির অপেক্ষায় থাকা খাদিজার কাছে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছে দেয়া এবং তাঁকে উপযুক্ত পরিবেশে রাখার আবেদন জন্য হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে।
এদিকে খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংহতি সমাবেশ করেছেন। এ সময় তারা ক্যানভাসে খাদিজার মুখচ্ছবি আঁকেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের খাদিজার সহপাঠীরা বলেন, বিনা বিচারে কারাগারে আটক রাখা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। খাদিজার আটকের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে সরকার।
প্রসঙ্গত, খাদিজাতুল কুবরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৭ বছর বয়সী ছাত্রী ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেইজে ক্যাম্পাসের রাজনীতি নিয়ে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা ইউটিউবে আপলোড করা ওয়েবিনারের একটি রেকর্ডিং দেখেছিলেন যা একজন অতিথি বক্তা আপলোড করেন। এর আগে কানাডায় অবস্থানরত একজন বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা সরকারের সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছিলেন বলে মনে করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা’ এবং প্রধানমন্ত্রীকে ‘মানহানি’ করার অভিযোগে ডিএসএ’র অধীনে একটি মামলা হয়েছিল।
প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট খাদিজাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরদিন তাকে ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয় হয়।