নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে পোস্ট, মৌলভীবাজারে হিন্দু যুবক কারাগারে
১৪ জুন ২০২২, ১৮:১৩ পিএম
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার সম্প্রতি এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মোহাম্মদের পাখাওয়ালা ঘোড়ায় চড়ে মেরাজে গমন শিশু আয়েশাকে বিয়ে সংক্রান্ত উল্লেখ করা বক্তব্যকে সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে মৌলভীবাজারে অমিত সিং নামের এক হিন্দু যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৩ জুন) সকালে আটক অমিত সিংকে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
এর আগে, ১২ জুন রোববার রাতে কমলগঞ্জের মাধবপুর চা-বাগানের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। অমিত সিং মাধবপুর চা-বাগানের দক্ষিণ লাইনের রামচন্দ্র সিংয়ের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, গত রোববার সন্ধ্যায় কমলগঞ্জের মাধবপুর চা-বাগানের অমিত সিং ও একই ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকার সঞ্জয় সিনহা নামে দুই যুবক নুপুর শর্মাকে সমর্থন করে তাদের নিজেদের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে পোস্ট দিয়েছে বলে স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়। স্থানীয় উগ্রপন্থীদের একটি চক্র তাঁদের পোস্ট দুটিকে ভাইরাল করে এলাকায় সাম্প্রদায়িক উম্মাদনার সৃষ্টি করে। ফলে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা হয়। স্থানীয় ধর্মান্ধ এবং উগ্রপন্থী মুসলমানরা একত্রিত হয়ে অমিত সিংয়ের বাসা ঘেরাও করেন। সঞ্জয় সিনহার গ্রামেও দেখা দেয় উত্তেজনা।
পরে রাতে তারা দুইজন তাদের বন্ধুর ফোন থেকে লাইভে এসে ক্ষমা চায়। লাইভে অমিত সিং ক্ষমা চাইলেও তার বক্তব্যের শেষাংশে বলেন ‘আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি বাংলাদেশি’।' আমি সরি ভাই, আমি ভেরি ভেরি সরি'। প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পরও উগ্রপন্থীদের উত্তেজনা প্রশমিত না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অমিতের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান জানান, খবর পেয়ে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অমিত সিংকে আটক করার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অপর পোস্টকারী সঞ্জয় সিনহা লাইভে এসে দুঃখ প্রকাশ করেই আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মানুভুতিতে আঘাতের গুজব ছড়িয়ে উগ্রপন্থী ও ধর্মান্ধ মুসলমানদের একটি চক্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, এদেরকে কঠোর হস্তে দমনের পরিবর্তে, ভিক্টিম সংখ্যালঘুদের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারে মাধ্যমে হয়রানীমূলক গ্রেফতার এবং বিনা বিচারে হাজতবাস করাতে বাধ্য করছে।
মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সরকারের ধর্মীয় উগ্রবাদ তোষণের কারণে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।