খুলনায় নারী ফুটবলারদের উপর বর্বরোচিত হামলা
৩০ জুলাই ২০২৩, ১২:৫৫ পিএম
খুলনা অনূর্ধ্ব ১৭ দলের ফুটবল খেলোয়াড় সাদিয়া নাসরিন ও সহযোগীদের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। সাদিয়া খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে' অনুশীলন করেন সাদিয়া। খেলাধুলার কারণে তাকে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
শনিবার স্থানীয়দের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তিনি হামলার শিকার হয়েছেন এবং সাথে তার সহযোগীরাও। আহতরা অবস্থায় বর্তমানে বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
সাদিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলন করার সময় নুপুর খাতুন নামের একটি মেয়ে আমার ছবি তুলে নেন। পরে বাড়িতে বাবা-মাকে দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে মন্তব্য করেন। শনিবার বিকেলে তার কাছে আমি বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে তিনি আমাকে কিল, চড়, ঘুষি মেরে মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন।
বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা ও আমার ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাকসহ অন্য খেলোয়াড়দের জানাই। তারা আমাকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুপুর খাতুনদের বাড়িতে যান। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বাড়ির আলাউদ্দীন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা বেগম মিলে আমাদের ওপর হামলা চালান। এতে আমার বান্ধবী মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মণ্ডল আহত হয়। তারা লোহার রড দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেন।’
আহত মঙ্গলী বাগচী বলেন, ‘তারা আমাকে আহত করে প্রায় দুই ঘন্টা হাত বেঁধে আটকে রেখেছিল। তখন আমি অজ্ঞান ছিলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি চেয়ারের সাথে আমার হাত বাঁধা। রক্তে আমার গা ভিজে গেছে। জ্ঞান ফিরলে হামলাকারীরা হুমকি দেয়- মেয়ে মানুষ হয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেললে গ্রাম থেকে বের করে দিবো। এই এলাকায় আসা নিষেধ। পরে স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।’
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অতীতে ফুটবল খেলা নিয়ে অনেক কটূক্তির শিকার হয়েছি। এবার আহত করা হল। হত্যার হুমকিও দেয়া হল। তবে আমি খেলা ছেড়ে দিব না। যতই বাধা আসুক ফুটবলের সাথে থাকবো।
মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী বলেন, শুধু ফুটবল খেলা নিয়ে আমাদের মেয়েদের নানা কটূক্তির শিকার হতে হয়। তাই অতীতে মেয়েদের নানাভাবে বুঝিয়েছি ফুটবল থেকে বেরিয়ে আসতে। এবার তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হল। মেয়েদের বলেছি- ফুটবল ছেড়ে দাও। কিন্তু তারা তো নাছোড়বান্দা, ফুটবল খেলবেই।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এক মেয়ের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বটিয়াঘাটা থানার ওসি শওকত কবির বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে মামলার আসামি নুর আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, অনুশীলনের সময়ে নারী ফুটবলারের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক দেবাশীষ কুমার মণ্ডল বলেন, প্রাইমারি স্কুলে থাকার সময় থেকে তারা আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বঙ্গমাতা ফুটবল টিমের খেলোয়ার ছিলেন এরা। তাদের ভালো খেলোয়াড় বানানোর জন্য এখানে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব রয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকেই চান না মেয়েরা ফুটবল খেলুক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা জরুরি।