নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ না দেয়ায় প্রধান শিক্ষককে দেড় ঘন্টা আটকে রেখে অকথ্য নির্যাতন

Anweshan Desk

Forhad Hossain Fahad

১০ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৭ পিএম


নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ না দেয়ায় প্রধান শিক্ষককে দেড় ঘন্টা আটকে রেখে অকথ্য নির্যাতন

উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ করে না দেওয়া ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যশোরে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেড় ঘন্টা ধরে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এ নির্যাতন করা হয়। অভিযুক্ত মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ভুক্তভোগী মোহাম্মদ নুরুল আমিন যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই শিক্ষক। ঘটনাটি জানাজানি হলে বর্তমানে ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না তিনি। এছাড়া বিদ্যালয়টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন টিপু উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্যাডারদের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে যশোর আদর্শ বহুমুখী বলিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টির কয়েকশ গজ দূরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ চৌধুরীর বাড়ি। ফলে বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চান ফরিদ চৌধুরী। কিন্তু তাকে সভাপতির পদ নিশ্চিত না করে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন। এজন্য প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করে ও ক্যাডার পাঠিয়ে গালাগালি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়টিতে সম্প্রতি তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি তাদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু নিয়োগের আগেই উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য বলেন। পরবর্তী সময়ে নিয়োগ হয়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান ফোন করে প্রধান শিক্ষককে নিয়োগপ্রাপ্তদের তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কর্মচারীরা না যাওয়ায় মোস্তফা ফরিদ প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি একাধিকবার ফোন করে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তার ক্যাডারদের স্কুলে পাঠিয়ে প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেন।

একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে বুধবার সকাল ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে যান। তিনি সেখানে গেলে তার দোতলার বাসভবনে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে গালাগালি করেন। পরে তার নিচের অফিসে বসে থাকা ক্যাডারদের ফোন করে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতে নির্দেশ দেন। মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ওই ক্যাডাররা দেড়ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষককে নির্যাতন করেন। তারা প্রধান শিক্ষকের গোপনাঙ্গ টিপে ধরেন। মাথা, ঘাড়, মুখসহ বিভিন্ন স্থানে কিলঘুসি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ‘শিক্ষকতা জীবনে আমি কোনো অন্যায় করিনি। নিষ্ঠার সঙ্গে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আর এ বয়সে এসে একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন নির্যাতনের শিকার হবো, তা কখনো কল্পনাও করিনি।আমার বিচার চাওয়ার ভাষা নেই। হত্যার হুমকির হুলিয়া নিয়ে দিন পার করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও কাছে বিচার চাইতেও পারছি না। আমি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর মোবাইলে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসান হাবিব বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিনকে দেড়ঘণ্টা ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্যাতন চালিয়েছেন। ঘটনাটি আমি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে শুনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানবাধিকার থেকে আরও


Link copied