ঢাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদকের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

Anweshan Desk

ডেস্ক রিপোর্ট

১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:৪৩ পিএম


ঢাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদকের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

ছবি : ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক

মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি স্টেশন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্তৃক রাজু ভাস্কর্য ঢেকে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা সংবলিত মেট্রোরেলের অস্থায়ী ব্যাকড্রপ স্থাপন করলে  ছাত্র ইউনিয়ন তার প্রতিবাদ জানায় এবং সরানোর আহ্বান জানায়। কিন্তুু তবুও না সরালে বামপন্থী একদল শিক্ষার্থী ভাস্কর্যের সামনে থাকা প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যাকড্রপটির কিছু অংশ ভেঙে ফেলে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ চার নেতার ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আহতদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছে।

তবে সৈকতের দাবি, ‘ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। হয়তো তারা এই হামলা করেছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাচ চত্বর এবং শাহবাগ মোড়ে পৃথকভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বাকি তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ, ঢাকা মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের সহকারী সাধারণ সম্পাদক তাহমিদ তাজওয়ার শুভ্র এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সংগঠক শাহরিয়ার শিহাব।

মাঈন আহমেদ বলেন, ‘আমরা রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ফুল দিয়ে টিএসসিতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সে সময় তানভীর হাসান সৈকতের কয়েকজন অনুসারী আমাদের ওপর নজর রাখছিল। পরে আমরা চারজন দু’ভাগ হয়ে যার যার গন্তব্যে রওনা হই।

‘সভাপতি মেঘ ও শুভ্র একটা রিকশা নিয়ে শাহবাগের দিকে আগায়। আর আমি ও শিহাব রিকশা করে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের দিকে যাচ্ছিলাম। ডাচ চত্বরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দুটি বাইকে করে ছয়জন রিকশাটি ঘিরে ফেলে আমাদের ওপর হামলা শুরু করে।’

তিনি বলেন, ‘হামলার পাশাপাশি ওরা বার বার বলছিল- আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যানার-ফেস্টুন কেন ভাঙা হয়েছে? পরে আশপাশের অনেকে আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলে ওরা চলে যায়।’

মাঈন আহমেদ বলেন, ‘একই সময়ে শাহবাগ মোড়ে মেঘ আর শুভ্রকে মারধর করা হয়। ওরা মেঘের চোখে ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করে। একে তার চোখে মারাত্মক জখম হয়েছে।’

ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি, ওরা গত দুদিন ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ‘বাম’ খুঁজছে। ‘বাম’দের খুঁজে খুঁজে মারার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছিল। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় আজ অগণতান্ত্রিকতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সব গোষ্ঠীকে একত্রিত হয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

 

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেনি। তবে এটা সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। আমি খবর পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙার ঘটনায় তারা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদেরকে মাফ করবে না। তাই ছাত্র ইউনিয়নকে অনুরোধ করব, প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় যেন তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।’

মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি স্টেশন উদ্বোধন সামনে রেখে গত মাসের শেষে রাজু ভাস্কর্যে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত মেট্রোরেলের অস্থায়ী ব্যাকড্রপ স্থাপন করে ছাত্রলীগ। এতে ‘থ্যাংক ইউ শেখ হাসিনা’ লেখা ছিল।

এই ব্যাকড্রপের কারণে প্রায় পুরো রাজু ভাস্কর্য ঢেকে যায়। এর প্রতিবাদ জানিয়ে ১ ডিসেম্বর বিবৃতি দেয় ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্রলীগকে রাজু ভাস্কর্য থেকে এটি সরানোর আহ্বানও জানায় তারা।

 

এদিকে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল হয়। সে সময় বামপন্থী একদল শিক্ষার্থী ভাস্কর্যের সামনে থাকা প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যাকড্রপটির কিছু অংশ ভেঙে ফেলে।

ওই ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। হামলায় সেদিন ৮ থেকে ১০ জন আহত হন। পরে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুরের এই কাজকে ছাত্র ইউনিয়নের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগ পুরো রাজু ভাস্কর্যই কালো কাপড়ে ঢেকে দেয়। এখনও কালো কাপড়ে ঢাকা রয়েছে রাজু ভাস্কর্য।

প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যাকড্রপটি ভাঙার দায় স্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, ‘রাজু ভাস্কর্যকে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং আমাদের সংগঠনের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই অপমান সহ্য করছিল। এই অবমাননার হাত থেকে কিছু শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যকে উদ্ধার করেছে। এই শিক্ষার্থীদের দলে আমাদের সংগঠনের কর্মীরাও ছিল। আমাদের এই বিক্ষুব্ধ কর্মীরা যেটা করে দেখিয়েছে সেজন্য তাদের অভিবাদন, যেটা সংগঠনের সিনিয়র নেতা হিসেবে আমরা পারিনি।’

মানবাধিকার থেকে আরও


Link copied