বিয়ের প্রলোভনে ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক : জবি শিক্ষককে অব্যাহতি
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৩০ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণিত বিভাগের এক ছাত্রীর মানসিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তার সাথে প্রমের সম্পর্ক করে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোর অভিযোগে একই বিভাগের এক শিক্ষককে সব বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে গণিত বিভাগের একাডেমিক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিভাগের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএস মানিক মুনশি এবং ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী একই বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, অভিযুক্ত ওই শিক্ষক তার নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ এক বছর প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। সেই সঙ্গে ওই শিক্ষক তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে বিয়ে করার আশ্বাস দেন। কিন্তু গত বুধবার ওই শিক্ষকের নিজ কক্ষে ওই ছাত্রীসহ দীর্ঘ সময় দরজা বন্ধ অবস্থায় থাকে। বিষয়টি বিভাগের অন্য একজন শিক্ষকের নজরে এলে ঘটনাটি প্রকাশ হয়।
পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণিত বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, ‘তিনি ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কীভাবে এমন জঘন্য কাজ করলেন—বিষয়টি আমাদের সবাইকে হতবাক করেছে। ঘটনা হাতেনাতে ধরা না পড়লে হয়ত আড়ালে থাকত। তিনি অস্বাভাবিক আচরণের কথা বলে ওই শিক্ষার্থীকে মধু এবং পানি পড়া পর্যন্ত খাইয়েছেন। তিনি নিজেই আমাদের বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী প্রথমে ওই শিক্ষকের কাছে কাউন্সেলিং এবং বিভিন্ন পরামর্শের জন্য যান। এই সুযোগে ওই শিক্ষক ছাত্রীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং একপর্যায়ে শিক্ষার্থীকে বিয়ে করবেন বলে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মানিক মুনশি বলেন, ‘আমি এ বিষয় নিয়ে আপনাকে কিছু বলতে চাচ্ছি না। যা বলার আমার বিভাগের চেয়ারম্যানকে বলব।’
অভিযোগের বিষয়ে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল আলম বলেন, ‘আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আমরা বিষয়টি বিভাগের একাডেমিক সভায় তুলেছি এবং প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই শিক্ষককে বিভাগের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগের পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা গণিত বিভাগের পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। উপাচার্য অসুস্থ থাকায় তাঁরা আবেদনটি আমাকে দিয়েছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আগামীকাল সকালে উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণ হলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’