নাশকতা এড়াতে ৮টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ, ২টি সীমিত
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১১ এএম
বিএনপি'র দেয়া চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতা এড়ানোর লক্ষ্যে দেশজুড়ে কয়েকটি রেলপথে চার জোড়া ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ও এক জোড়া ট্রেনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এসব ট্রেনের সব কটিই রাতে চলাচল করে। এ ছাড়া রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৭০০ আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার কমলাপুর রেলস্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার শফিকুর রহমান।
রেলের হিসাবে এক জোড়া ট্রেন হলো গন্তব্য স্থানে যাওয়া এবং আসা। অর্থাৎ চার জোড়া ট্রেনের চলাচল স্থগিত মানে আটটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হলো। আর দুটি ট্রেনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে যাত্রীবাহী সাড়ে তিনশ'র বেশি ট্রেন রয়েছে।
শফিকুর রহমান বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় থেকেই দেশজুড়ে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে ভূয়াপূর, জামালপুর থেকে সরিষাবাড়ী ও যমুনা এক্সপ্রেস স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো রিমোট এরিয়া এবং রাত্রিকালীন যাত্রা হওয়ায় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, তাই বন্ধ করা হয়েছে।
রাতে চলাচলকারী আরও কিছু ট্রেনের চলাচল বাতিল করার পরিকল্পনা আছে বলেও তিনি জানান। এর মধ্যে ঢাকা থেকে সিলেট পথের সুরমা মেইল রয়েছে। ট্রেনটি রাত সাড়ে নয়টার দিকে টাকা থেকে ছেড়ে সারা রাত রাস্তায় থাকে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সিলেট পৌঁছায়। আবার এটি সিলেট থেকে রাত সাড়ে সাতটায় ছেড়ে পরদিন সকালে ঢাকায় পৌঁছায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে নোয়াখালীর পথে চলাচলকারী ঢাকা মেইল ট্রেনটির যাত্রাও বাতিল করার পরিকল্পনা আছে। এটিও রাতে চলাচল করে।
তিনি বলেন, রাতে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে এমনিতেই যাত্রী কিছুটা কম হয়। আবার কিছু কিছু পথ এত নির্জন যে রাতে পাহারা দেওয়া কঠিন। এ ছাড়া নাশকতার আশঙ্কায় প্রায় প্রতিটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেনের আগে পর্যবেক্ষণের জন্য ট্রেন (পাইলট) চালানো হয়। এতে ইঞ্জিনেরও কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চার জোড়া ট্রেনের যাত্রা বাতিল এবং এক জোড়া ট্রেনের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
তবে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে অ্যাডভান্স (আগাম) পাইলটিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী স্থাপনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। ২০১৪ সালে যেসব জায়গায় নাশকতা হয়েছিল, সেসব জায়গাগুলোতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারণ সমগ্র লাইনের কোথায় কোথায় নাশকতা হতে পারে তা আগেই বলা সম্ভব নয়, তিনি যোগ করেন।
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে গত সোমবার রাত ১১টার দিকে ছেড়ে আসে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন ছেড়ে আসার পর মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে নাশকতাকারীরা বনানী এলাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ট্রেন তেজগাঁও স্টেশনে এসে থামে। তবে ততক্ষণে ট্রেনের ৩টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়্। এ ঘটনায় ‘জ’বগিতে থাকা মা ও শিশুসহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর তাদের স্বজনদের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর বিএনপির অবরোধের মধ্যে গাজীপুরের ভাওয়ালে রেল লাইন কেটে ফেলায় এই মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগিসহ উল্টে পড়েছিল। সেই ঘটনায় একজন নিহত হন। রেললাইন কেটে নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার ঘটনায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ছাড়া গত ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইলে একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয়া হয়। এতে ট্রেনটির দুটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর দুদিন পর ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ‘যমুনা এক্সপ্রেসে’ আগুন দেয়া হয়। এতে ট্রেনটির দুটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২২ নভেম্বর ‘উপবন এক্সপ্রেস’ সিলেট স্টেশনে থাকা অবস্থায় আগুন দেয়া হয়। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও একটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মূলত রেলপথে এসব নাশকতা প্রতিরোধে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সেই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।