মান্টোর উক্তি ফেসবুকে পোস্ট করা সেই প্রীতম দাস গ্রেফতার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে

Anweshan Desk

সংখ্যালঘু নির্যাতন ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:৪৩ এএম


মান্টোর উক্তি ফেসবুকে পোস্ট করা সেই প্রীতম দাস গ্রেফতার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে

প্রীতম দাস

পাকিস্তানের দুর্দশা নিয়ে দেশটির লেখক সাদত হোসেন মান্টোর একটি উক্তি পোস্ট করায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রীতম দাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রীতমের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মাহবুব আলম ভুঁইয়া। সে মামলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের একটি বাড়ি থেকে প্রীতমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (পরিদর্শক-তদন্ত) হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিলেন মাহবুব।

পাকিস্তানের জনপ্রিয় লেখক মান্টোর একটি উক্তি গত ৮ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট করেন প্রীতম। এর ঠিক আগের দিন ৭ জুলাই একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ‘নও পাকিস্তানি নও বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি লেখায় পাকিস্তানের দুর্দশার বর্ণনা করতে গিয়ে মান্টোর ওই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন।

সেই লেখা থেকে নেয়া মান্টোর উদ্ধতি নিয়ে পোস্ট দেয়ার পর প্রীতমের বিরুদ্ধে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তোলেন শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্ট ভাইরাল হলে শ্রীমঙ্গলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

গত ৩১ আগস্ট প্রীতম দাশকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘শ্রীমঙ্গলের উগ্রবাদী ধর্মান্ধ মুসলিম জনতা’। এরপর থেকে প্রীতম আত্মগোপনে ছিলেন।

মান্টোর উদ্ধৃতি নিয়ে গত ২৮ জুলাই সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এবং মৌলভীবাজার-২ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান নামের ফেসবুক পেজ থেকেও একই স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছিল। তবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে কেবল প্রীতমের বিরুদ্ধে।

চা-শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার কারণে তার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে বলে এর আগে অন্বেষণকে জানিয়েছিলেন প্রীতম।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন গত ২৯ আগস্ট নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন।

গত ৮ জুলাই দেয়া প্রীতমের পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করে এতে আবেদ লেখেন (বাক্য, বানান অপরিবর্তীত), ‘আমি তার ফেসবুকে ৭ জুলাইয়ের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দিলাম যেখানে সে দেশের অবস্থা নাজেহাল বুঝাতে গিয়ে আমাদের ইসলাম ধর্মকে ব্যাঙ্গ করে উদাহরণ দিয়েছে, জুমার নামাজ, মসজিদের ইমাম এবং মুসল্লীদের নামাজ পড়াকে ব্যাঙ্গ করেছে।’

স্ট্যাটাসে আবেদ লেখেন, ‘আমি শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও শ্রীমঙ্গল থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এ ধরণের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে যারা পবিত্র ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক কথা বলে তাদেরকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তারা কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে করতে চায় তা বের করা দরকার।‘

আবেদের এই স্ট্যাটাসের পর তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীসহ আরও অনেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এরপরের বুধবার মিছিল হয় শ্রীমঙ্গলে। সেই মিছিল থেকে প্রীতমকে গ্রেপ্তারে শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়।

চা-শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন প্রীতম।চা-শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকায় প্রীতমের পুরনো একটি স্ট্যাটাস নিয়ে শ্রীমঙ্গলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ২৭ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ করে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। শ্রীমঙ্গলে চৌমোহনা চত্বরে আয়োজিত এ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটে। আয়োজকরা প্রথম থেকেই অভিযোগ করছেন, স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি অংশ এ হামলা চালায়।

প্রীতম দাশ ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। হামলার পর ২৯ ও ৩০ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে দুটি সংবাদ সম্মেলন করে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রীতম দাশ।

এতে তিনি অভিযোগ করেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেনের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সমাবেশে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১০ জন কর্মী আহত হন।

এই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ফেসবুকে ধর্ম অবমানননার অভিযোগ এনে প্রীতমের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেন আবেদসহ অন্যরা।

প্রীতম দাশ গত ৩১ আগস্ট নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চা শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমাদের সমাবেশে আবেদের নেতৃত্বে হামলা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আমি তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছিলাম। সে কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার নামে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে উসকানি ছড়াচ্ছে।’

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে আরও


Link copied