পার্বত্য অঞ্চল যেন জঙ্গিদের আঁতুড়ঘর : হামলার আশঙ্কা
০৫ নভেম্বর ২০২২, ০১:০৩ এএম
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘরছাড়া ৫৫ জন এখনও নিখোঁজ। তারা এরই মধ্যে পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদের জন্য ভারী অস্ত্র কিনতে ১৭ লাখের বেশি টাকা জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেয়ার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
অভিযানে বেশ কিছু জঙ্গি গ্রেপ্তার ও তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা জানিয়েছেন।
হিজরতে’ বের হওয়া ৫০-এর বেশি জঙ্গির খোঁজ না পাওয়া, পার্বত্যাঞ্চলে প্রশিক্ষণ, ভারী অস্ত্র- এসব মিলিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে র্যাব।
তবে হামলার মতো সম্ভাব্য বিষয় মাথায় রেখে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পার্বত্যাঞ্চলের গহিন এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
গত ৬ অক্টোবর থেকে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এলাকায় চার দফায় অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লাকসামে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আরও চারজনকে।
এই ২৬ জনের মধ্যে সংগঠনের সূরা সদস্য, সামরিক শাখার শীর্ষ নেতা, অর্থবিষয়ক ও হিজরতবিষয়ক সমন্বয়ক রয়েছে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন আরও অনেকে।
বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হওয়া চারজন হলেন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার অর্থবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু, সারা দেশে হিজরতরত সদস্যদের সার্বিক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল ও ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর। আর সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি হেলাল আহমেদ জাকারিয়া।
গ্রেপ্তার এই সদস্যদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র্যাব। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে শুক্রবার কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিরা এবং সংগঠনটির আমিরসহ দায়িত্বশীলরা সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণ গ্রহণে নতুনদের আগ্রহী করে তুলত। আব্দুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল ও ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর সংগঠনটির আমির মাহমুদের একান্ত সহযোগী। সেই সুবাদে তারা সারা দেশে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তাত্ত্বিক ও সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর কাজটি সমন্বয় করত। পটুয়াখালী, ভোলাসহ সমতলের বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ শেষে হিজরত করা ব্যক্তিদের কুমিল্লায় তাদের সেইফ হাউসে রাখা হতো।
র্যাব মুখপাত্র জানান, পরবর্তী সময়ে সুবিধাজনক সময়ে তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যটক বা অন্য ছদ্মবেশে পার্বত্যাঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠাতেন। গত মার্চ-এপ্রিলের দিকে ১৭ জন এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ১২ জন তরুণকে পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানে পাঠিয়েছে তারা।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাশকতার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জঙ্গিদের নাশকতার যে বিষয় রয়েছে, র্যাব ফোর্সেসের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে। আমরা ধরেই নিয়েছি, যেহেতু অনেকেই নিরুদ্দেশ, যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিবাদ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু এটা নির্মূল হয়নি। আমরা কখনোই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না, যেকোনো সময়ই যেকোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নাশকতা করতে পারে। এ ধরনের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এখনো আমাদের অনেক সদস্য পার্বত্যাঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে।’
খোঁজ না পাওয়া অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে নিয়ে মাথাব্যথার কারণ হিসেবে খন্দকার মঈন বলেন, ‘আমরা যে ৫৫ জনের তালিকা দিয়েছি, তাদের একজনকেও পাইনি। তারা কী পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতরে আছে নাকি বিভিন্নভাবে বেরিয়ে এসেছে। যেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তা গহিন বনাঞ্চল। যেখান থেকে পরিচয় গোপন করে যাওয়া-আসা অনেক সহজ। যখন যায়, তখন ট্যুরিস্ট হিসেবেই যায়। পার্বত্যাঞ্চলে অনেক অরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। যেখানে তারা বিভিন্নভাবে যেতে পারে।’