চিতলমারীতে নবী অবমাননার গুজবে হিন্দু কিশোরী আটক, থানায় উগ্রপন্থীদের হামলায় আহত ২৫
২১ জুন ২০২২, ১৯:৪৭ পিএম
বাগেরহাটের চিতলমারীতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মোহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির গুজব তুলে এক হিন্দু কিশোরীকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (১৯ জুন) রাতে তাকে আটক করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ছাত্রী পুলিশকে জানান, ঐ আইডিটি অনেক আগেই হ্যাক হয়েছিলো এবং হ্যাকাররাই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছে। এলাকার অন্য একটি সূত্রের দাবি এক মুসলমান যুবকের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণেই ঐ কিশোরীকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার (২০ জুন) দুপুরে থানায় সামনে ঐ কিশোরীর ফাঁসীর দাবিতে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় উগ্রপন্থী মুসল্লিরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা থানায় প্রবেশ করে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাইলে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় উগ্রপন্থী মুসুল্লিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। উগ্রপন্থিদের সামাল দিতে পুলিশও ২৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসময় অতিরুক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদ হোসেনের গাড়ি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি এবং ধথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গাড়ি, ৪টি মোটরসাইকেল ও থানার কাচের জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা আইন হাতে তুলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। তাদেরকে বাঁধা দিলে সংঘর্ষে রুপ নেয়। এতে ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম সেলের সমন্বয়কারী পরিদর্শক এস এম আশরাফুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষার্থীর নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) কে নিয়ে “অবমাননা” করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
তিনি আরো বলেন, “ওই শিক্ষার্থীর দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মানুভুতিতে আঘাতের গুজব ছড়িয়ে উগ্রপন্থী ও ধর্মান্ধ মুসলমানদের একটি চক্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন, লাঞ্ছিত করাসহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সরকারের ধর্মীয় উগ্রবাদ তোষণের কারণে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার বারবার ঘটছে।