ধারাবাহিক বৈঠকে কী বার্তা দিচ্ছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

Anweshan Desk

Anweshan Desk

০৪ অগাস্ট ২০২৩, ১৩:৫৫ পিএম


ধারাবাহিক বৈঠকে কী বার্তা দিচ্ছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

জাতীয় নির্বাচন যত কাছে আসছে, ততই বাড়ছে কূটনীতিক দৌড়ঝাঁপ। বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের ধারাবাহিক বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহলের শেষ নেই। চোখে লাগার মতো কূটনীতিক তৎপরতায় সরকারের ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ মনে করছে, এই কূটনীতিক তৎপরতায় তাদের রাজনৈতিক অবস্থানের যৌক্তিকতা জোরালো হচ্ছে।

যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমেরিকা ও আওয়ামী লীগের একই চাওয়া– অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে এক দিন আগেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রকাশ্যে সমাবেশে বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মার্কিন দূত জবাবদিহি চেয়েছেন। মেনন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিনিদের মাথা না ঘামানোরও পরামর্শ দেন।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি সক্রিয়। সরকারি দল, বিরোধী দল ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত। প্রতিটি বৈঠকে বার্তা দিচ্ছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভিসা নীতি ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য একটি নেতিবাচক বিষয়।

এই ঘোষণার পরও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার কাজটি করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দূতের এসব বৈঠকে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার বিষয়ে বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন আইনের ফাঁকফোকর। নির্বাচনের আচরণবিধি, নির্বাচন নিয়ে আদালতের রায়, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আসার ক্ষেত্রে আচরণবিধিসহ কী কী ক্ষেত্রে প্রার্থী বা পর্যবেক্ষকরা অযোগ্য হতে পারেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নখদর্পণে রাখার চেষ্টা করছেন পিটার হাস।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবার আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে আইন ও সংবিধান দিয়ে কোনো যুক্তিতে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরোধিতা না করা যায়, সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যতগুলো নিয়ামক আছে তা চিহ্নিত ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।  ভিসা নীতি ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র এতটাই বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কেউ এর বিরোধিতা করতে পারেনি। ঠিক এ রকম কিছু প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দৌড়ঝাঁপ করছেন পিটার হাস।

কূটনীতিকরা বলছেন, ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বড় সংকট দেখা দেয়। ওই সময় গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে ভালো ভূমিকা রেখেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দেশটি পুরোটা সময় শুধু পর্যবেক্ষণ করেছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার দায়িত্বটি বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। তবে গেল ১৫ বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হওয়ার বদলে সংকটের দিকেই গেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে এবার আরও সক্রিয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নব্বই দশক থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে কূটনীতিকদের তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল। এর আগে প্রতিবেশী দেশ ভারত অনেকটা প্রকাশ্যে এলেও এবার তাদের তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। ঢাকায় ভারতের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া যায়, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

গতকাল দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সে দেশের মানুষের ইচ্ছা অনুসারেই হবে। ভারত গভীরভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এখনই সে বিষয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থানে ভারত নেই। ভারত চায় নির্বাচন নিয়ম অনুযায়ী হোক, সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হোক।

১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে আসে। ওই হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। পরে ঢাকায় জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী শেলডন ইয়েটকে ২০ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশ করে সরকার। একই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথ বিবৃতি দেয়। পরে ওই ১৩ বিদেশি মিশনের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে সরকারের অসন্তোষের কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।  

এদিকে পিটার হাস সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনীতিকের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করলেও তিনি সব জায়গায় একই কথা বলছেন। গতকাল আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সহিংসতা চায় না, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট কীভাবে সমাধান হবে, সে প্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোকেই নির্ধারণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অবস্থান নেই। মূলত রাজনৈতিক দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা কোন পথ বেছে নেবে। আমরা কেবল সহিংসতামুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন (নিশ্চিতে) নিয়ে উদ্বিগ্ন ও আগ্রহী।

জাতীয় থেকে আরও


Link copied