স্বর্ণ ডাকাতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে জন্মাষ্টমী পরিষদের ২ হিন্দু নেতা
১২ অগাস্ট ২০২৩, ২১:৫৬ পিএম
চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমী পরিষদ নামক একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের ২ নেতা এবং সহোদর ধর্মীয় পরিচয়ের আড়ালে তৈরি করেছেন স্বর্ণ ডাকাতির সিন্ডিকেট। এমন দুই সহোদরকে ১৪টি স্বর্ণের বার ডাকাতির ঘটনায় আটক করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এ সময় এক ভাইয়ের পুজার ঘর থেকে ডাকাতি করা স্বর্ণের বারসহ নগদ সাড়ে ছয় লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্ত দুই সহোদরের মধ্যে প্রবীর বণিক চট্টগ্রাম মহানগর জন্মাষ্টমী পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং অপর ভাই জয়ন্ত বণিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। যেখানে তাদের ধর্ম-কর্ম করার কথা সেখানে দুই ভাই মিলে করেন স্বর্ণ ডাকাতি।
রবিবার (৬ আগস্ট) ভোরে হাজারী গলির মুখে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে দুই দফায় দুই সহোদরসহ মোট ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন জয়ন্ত বণিক, প্রবীর বণিক, আব্দুর রউফ, মো. মাঈনুদ্দীন হাসান তুষার এবং শ্রাবণী বণিক, মো. আলমগীর (৫২) ও সরোয়ার (৩২)। এদের মধ্যে শ্রাবণী বণিক জয়ন্ত বণিকের স্ত্রী।
ডাকাতির ঘটনায় নিজ সংগঠনের নেতারা গ্রেপ্তার হলেও এই বিষয়ে কিছুই জানেন না সংগঠনের কর্তারা। যদিও প্রতিবেদকের কাছে ঘটনা শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর জন্মাষ্টমী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শংকর সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমি তো এই বিষয়ে কিছুই জানি না, আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। যদি ঘটনা সত্য হয় তবে প্রবীরকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
একইভাবে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর সেন বলেন, ‘এমন একটা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। তবে জয়ন্ত নামে কেউ এটার সঙ্গে যুক্ত তা জানি না। এমনকি জয়ন্ত আমাদের কমিটির সদস্য, সেটাও আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি, সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর পূর্বে গত ৬ আগস্ট হাজারী গলির বনলতা কাটিং সেন্টার নামের স্বর্ণালঙ্কার তৈরির কারখানার ব্যবস্থাপক কনক ধর কাপড়ের শপিং ব্যাগের ভেতর করে ১৪টি স্বর্ণবার নিয়ে গরীবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় যাওয়ার জন্য রিকশায় রওনা হন। রিকশাটি হাজারী গলির মুখে এলে আটকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বর্ণের বারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এই ঘটনায় কনক ধর বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা দেখে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ৫ জনের দেওয়া তথ্যমতে আরো দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই সময় তাদের কাছ থেকৈ ছয়টি স্বর্ণের বার ও নগদ ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, পেশায় কারিগর দু’ভাই জয়ন্ত বণিক ও প্রবীর বণিক মিলে স্বর্ণের বার ছিনতাইয়ের এই চক্র গড়ে তুলে।
তিনি আরও জানান, আসামি জয়ন্ত বণিক হাজারী গলিতে স্বর্ণের কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণের কারিগর হিসেবে কাজ করার কারণে পাশাপাশি তিনি স্বর্ণের ব্যবসাও করতেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী হাজারী গলির স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরকে টার্গেট করে এবং ব্যবসায়ীদের স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে থাকে। ব্যবসায়ীরা কখন, কার মাধ্যমে, কোথায় স্বর্ণ আনা নেওয়া করে তার গতিবিধি নজরদারিতে রাখে। কোনো ব্যবসায়ীর স্বর্ণের বার পাঠানোর তথ্য পেলে সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ভাই প্রবীর বণিক অথবা অন্য লোকের মাধ্যমে স্বর্ণের বার ছিনিয়ে নিতো। পরবর্তীতে আসামি জয়ন্ত বণিক মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের মালিকের সঙ্গে রফা-দফা করে কিছু স্বর্ণের বার মালিককে ফেরত দিতো, কিছু স্বর্ণের বার নিজেরাই হাতিয়ে নিতো।