বিএনপির কর্মসূচি : শেষদিনে ১৩ টি সহ মোট ১১০ টি গাড়িতে আগুন
০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২০:০৪ পিএম
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন গতকাল সোমবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ঘটেছে ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা। রাজধানীতে আগুন দেওয়া হয়েছে চারটি বাসসহ পাঁচটি গাড়িতে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য স্থানে চারটি বাসসহ আটটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া একটি কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে ছিলেন সাধারণ মানুষ। ২৮ অক্টোবর থেকে গতকাল ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে ফ্যান সার্ভিস জানায়।
জানা যায় , বিএনপি -জামায়াতের দ্বিতীয় দফা অবরোধ কর্মসূচির গত দুই দিনে রাজধানীতে মোট ২২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম দিন আগুন দেওয়া হয় ৯টি গাড়িতে। রোববার মধ্যরাতে মুগদা সিএনজি পাম্পের সামনে একটি লেগুনায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সোমবার দুপুর ২টায় গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে বিকল্প অটো সার্ভিস পরিবহনের বাসে আগুন দেওয়া হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় মিরপুর ১০-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত পৌনে ৯টায় খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের পাশে আকাশ পরিবহনের বাসে আগুন দেওয়া হয়। মিরপুর-৬ এলাকায় রাত সাড়ে ৯টায় বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে ঢাকার বাইরে গাজীপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী ও মানিকগঞ্জে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
গতকাল গাজীপুরে দুটি বাসে আগুন দেয়া হয়। ভোর ৪টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় একটি বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসটি পুড়ে যায়। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান চালক। এর আগে রাত ২টার দিকে মহানগরীর সদর থানার শিববাড়ী-শিমুলতলী সড়কের বটতলায় থেমে থাকা একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে সকালে জয়দেবপুর রোডের নলজানি এলজিইডি ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জের মুখে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনায় মহানগর বিএনপি নেতা জি এস সুরুজ আহমেদসহ অন্তত ১০ জন আহতের দাবি করেছে দলটি।
চট্টগ্রামে দুটি বাস ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া একটি কাভার্ডভ্যানও ভাঙচুর করা হয়। অবরোধের সমর্থনে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নগরের আমিন জুট মিলের গলি থেকে একটি দল মিছিল বের করে। তারা পাঁচলাইশ থানার আতুরার ডিপো এলাকায় গিয়ে সড়কের পাশে রাখা একটি অটোরিকশায় আগুন দেয় এবং একটি কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে ভোর ৫টায় আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজারে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। আগুনে বাসটি পুড়ে গেছে। ভোরে যশোর-বেনাপোল সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর আগে রাতে বায়েজিদ-অক্সিজেন সড়কে থেমে থাকা একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
গতকাল সকালে বগুড়া শহরের বেতগাড়িতে একটি লরিতে আগুন দেওয়া হয়। সরকারি আজিজুল হক কলেজের ফটকে ও দুটি ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কলেজের নিরাপত্তা প্রহরীরা ফটকের তালা ভেঙে ফেলেন।
বিকেল ৩টায় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় পণ্যবাহী ট্রাকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। উপজেলার মৌগাছি নন্দনহাট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ট্রাকচালক জহুরুল ইসলাম জানান, রাজশাহী থেকে মুরগির খাবার নিয়ে বাগমারা যাওয়ার পথে কয়েক যুবক পেট্রোল বোমা ছোড়ে। এ সময় ট্রাকে আগুন ধরে যায়। তারা ট্রাক থেকে নেমে গেলে ওই যুবকরা ভাঙচুর চালায়। রাত সাড়ে ৮টায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে ভোর ৪টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর এলাকায় মহাসড়কে গাছ কেটে ফেলে রাখায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ গিয়ে ডালপালা সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সকালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদের ফটকে তালা ও ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। পরে তালাগুলো খুলে ফেলে প্রশাসন।
ফায়ার সার্ভিসের হিসেবে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১০টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর একটি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ৬টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি ও ৬ নভেম্বর ১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।