নির্যাতন বন্ধে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের
২৩ জুলাই ২০২২, ১৯:৫৪ পিএম
ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। পাশাপাশি সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার সকল মামলার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (২২) জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠক ও আলোচনায় দাবিগুলো জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ডা. এম. কে. রায়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. শ্রীমতি সোনালী দাস।
ডা. এম. কে. রায় বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রবণতা বেড়েছে। ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছোট-বড়ো প্রায় সাড়ে তিন হাজার হামলা হয়েছে। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির দরুন এই পরিস্থিতি এখন ভয়ঙ্কর ও অসহনীয় হয়ে উঠছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোনো ধর্মকে অবমাননা করার অধিকার যেমন কারও নেই, তেমনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর, খুন ও নির্যাতন করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় হামলা বেড়েই চলেছে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে। কক্সবাজারের রামু থেকে নড়াইলের সাম্প্রদায়িক হামলা পর্যন্ত একটি ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার আমরা পাইনি। সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। প্রতিটি ঘটনা পুলিশ ও প্রশাসনের সামনেই ঘটছে।
অনুষ্ঠানে জোটের সভাপতি সোনালী দাস বলেন, 'স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হিন্দুরা যা উৎসর্গ করল তার প্রতিদানে এখন যা দেখছেন এতে তারা মর্মাহত, ব্যাথিত। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন চাই না। সহিংসতা চাই না। শান্তিতে থাকতে চাই। এ দেশের জনগণের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। ২০০১ সালে জামায়াত ও বিএনপি যা করেছে, ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়, এমন প্রশ্ন তোলেন জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাস। জোটের আইনবিষয়ক সম্পাদক উদয় দাস বলেন, যে বাংলাদেশ হিন্দুদের রক্তে ভিজবে, এমন বাংলাদেশ তারা চান না।'
অনুষ্ঠানে ভক্তসংঘের সভাপতি শান্তি রঞ্জন দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও হিন্দুরা স্বাধীনতা পায়নি।’
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিচারটা হওয়া দরকার। বিচার হলে এমন প্রবণতা কমবে।
পরে ডা. এম. কে. রায় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলোঃ
১. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন
২. ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধ করতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার সব মামলার দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. এযাবতকালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয়, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত অপরাধী কারা জড়িত তা উদঘাটনে একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ভুক্তভোগীদের সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদান করা।
৪. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা।