বর্তমানে সময়ে দেশে কেন বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে ?

Anweshan Desk

সাদেক মাহমুদ

১১ জুন ২০২৩, ২৩:৫৫ পিএম


বর্তমানে সময়ে দেশে কেন বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে ?

বিবাহ বিচ্ছেদ !

ধর্মান্ধ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা:

বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবার ই ধর্মান্ধ এবং পুরুষতান্ত্রিক, এখানে ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্রের আদলে গড়ে উঠা সমাজ এই আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও নারীদের গৃহ বন্ধী ও কোণঠাসা করে রাখতে চায়। কিছু পরিবার শুধুই যে কোণঠাসা করে রাখে এমনটাই নয় শুধু, বরং সেখানের ধর্মান্ধ পুরুষতান্ত্রিক পুরুষ তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় নারীর উপর, নারীকে তার হুকুমের গোলাম তথা দাসি বানিয়ে রাখতে চায়।

একটি অপ্রিয় বাস্তবতা হচ্ছে বেশিরভাগ পুরুষই যৌনতায় এক নারীতে বেশিদিন সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না, নারী যত সুন্দরীই হোক না কেনো, তার প্রতি অনীহা আসেই। বিয়ের কিছুদিন বা কয়েকমাস পরেই নিজের বউয়ের প্রতি কামভাব কমতে থাকে, তখন দেখা যায় যে পুরুষতান্ত্রিক পুরুষ তার কর্তৃত্বের বলে নারীর উপর অবজ্ঞা অবহেলা সহ সরব কিংবা নীরব শারীরিক মানসিক নির্যাতন চালায়, যেটা বাহির থেকে কেউ দেখে না, দেখতে পায় না। ফলে নারীরা এইসব পুরুষতান্ত্রিক স্বামীর সাথে সংসার করতে অতিষ্ট হয়ে উঠে।

বর্তমানে মেয়েরা পড়াশুনা করে পৃথিবীকে জানতেছে, বুঝতেছে, এবং সচেতন হচ্ছে। তাঁরা এখন আর আগের মত মুখ বুঁজে সব কিছু সহ্য করে না, তারা মুখ ফুটে নিজেদের অধিকারের কথা বলতে শিখেছে। এখন তারা আধুনিক যুগের আলোকে ঘুরে দাড়াচ্ছে, নিজের প্রতি ধর্মান্ধ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলছে, প্রতিবাদ করছে।

বাস্তবতা এটাই যে ধর্মান্ধ সমাজে নারীরা যত শিক্ষিত এবং সচেতন হবে, ততই বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়বে।

তবে কি নারীরা শিক্ষিত স্বাবলম্বী সচেতন হবে না? অবশ্যই হতে হবে। একটি জনবহুল গরীব এবং উন্নয়নশীল দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নারী পুরুষের সমান তালে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হতেই হবে। এই যুগে একটি সুস্থ স্বাভাবিক সংসার নিশ্চিত করতে হলে এখনকার পুরুষদের ধর্মের নামে, সামাজিকতার নামে, বা কোন প্রাচীন প্রথার নামে নারীদের নিজের দাসী বানিয়ে রাখার মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একজন মূর্খ নিরক্ষর ধর্মান্ধ নারী তার স্বামীকে প্রভু হিসেবে মেনে নিলেও একজন স্ব শিক্ষিত নারী চায় বন্ধুসুল্ভ একজন স্বামী। এটিই স্বাভাবিক হওয়া উচিত, কেউ কারো দাসত্ব কেনইবা মেনে নিবে। সুতরাং নারীকে নিজের থেকে ছোট, গৃহকর্মী কিংবা দাসী নয়, নিজের সমকক্ষ মানুষ ভাবতে শিখুন, বন্ধু ভাবতে শিখুন, সংসার সুন্দর হবে।

 

সোশ্যাল মিডিয়া:

আমরা আজকাল কমবেশি সবাই এটার সাথে জড়িত। অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়েন সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি কিংবা নিউজ স্ক্রলিংএ। অনেকেই এই আসক্তির মাধ্যমে পরিবারের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। চোখ ধাঁধানো নানান পেজে গ্রুপে ফাঁদে কেউ কেউ ডুবে যাচ্ছেন, ভুলে যাচ্ছেন বাস্তবতা। ফলে বাস্তব জীবনে কেউ কাউকে সময় দিচ্ছে না।

বর্তমানে যুগের অন্য আরেকটি খারাপ দিক হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহজেই সম্পর্ক-স্থাপন করা যায়। ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার-হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো ইত্যাদি সহজলভ্য হওয়ায় সবাই অতি সহজেই পেয়ে যাচ্ছে নতুন সঙ্গী। ফলে পরকীয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে অনেক নারী-পুরুষ। গড়ে তুলছে এক্সট্রা সম্পর্ক, যেখানে অন্য পুরুষ বা নারীতে আসক্তি সংসারে অশান্তি-অবিশ্বাস নিয়ে আসছে৷ একসময় উভয়পক্ষ এর থেকে পরিত্রানের শান্তিপূর্ণ পথ হিসেবে বিবাহবিচ্ছেদকে বেছে নেয়।

 

অর্থসঙ্কট:

বর্তমান যুগে একটি সুখি সংসার নিয়ে টিকে থাকতে হলে অর্থের গুরুত্ব অপরিশিম। ‘‘কথায় আছে, অভাব যখন দরজা দিয়ে ঢুকে, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।‘’ কথাটি একেবারে ফেলে দেওয়ার মত নয়। বর্তমানে সময়ে বিবাহিতদের অস্বচ্ছলতায় সংসারে অভাব-অনটন এবং এর ফলে ঘটা কথা কাটাকাটি ও অশান্তির কারনেও অনেক ডিভোর্স হচ্ছে।

সুস্থ যৌনতার তাড়না:

দাম্পত্য জীবনে যৌনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিয়ের পর সুস্থ যৌনতার অভাবেও অনেক ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে। দেখা যায় যে, পারিবারিক ভাবে দুজন অপরিচিত নারী-পুরুষের বিয়ে হয়, যেখানে দুজন মানুষের যৌন চাহিদা ও যৌনতার বৈশিষ্ট্য প্রায় বিপরীত মুখি হওয়ার ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে বিয়ের আগে জেনে শুনে বুঝে দুজনের মন মানসিকতার মিল দেখে দাম্পত্য জীবনে ঝরানো।

 

আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী, শারীরিক-মানসিক ভাবে সুস্থ এবং যথেষ্ট ধৈর্য-সহ্যের অধিকারী না হইয়ে, হুট করে বিবাহ করাকে না বলুন।


Link copied