হাদিস সংস্কারে হাত দিয়েছেন সৌদি সরকার
০৭ জুলাই ২০২৩, ২১:০০ পিএম
গত কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছেন এমবিএস হিসেবে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৌদিকে তাদের ‘মানে’ নিয়ে যেতে চান এই প্রিন্স ক্রাউন। গত বছর তিনি মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন যে, হাদিসের অপব্যবহার মুসলিম বিশ্বে চরমপন্থি এবং শান্তিপূর্ণ মানুষের মধ্যে বিভক্ত হওয়ার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তিনি হাদিস সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এ মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বে এই সময়ে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি খবর হলো, এই হাদিস সংস্কারের সিদ্ধান্ত। সহি হাদিসগুলো খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তিনি ‘কিং সালমান কমপ্লেক্স’ নামে একটি কমিটি গঠন করেছেন।
কমিটিকে দেখতে বলেছেন কোন হাদিসগুলো মোহাম্মদের (সা.) বাণীর সঙ্গে খাপ খায় না এবং হিংসা ও হত্যাকান্ডকে যথার্থ প্রমাণ করতে মোহাম্মদের (সা.) বাণীকে বিকৃত করেছে। যে সব হাদিস রক্তারক্তি ও হানাহানির কথা বলে, মোহাম্মদের (সা.) বার্তাকে বিকৃত করে সেগুলো তিনি হাদিস থেকে বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়াও তিনি সৌদির মূলধারার গণমাধ্যম "আল আরাবিয়া" কে দেয়া গত বছরের একটি সাক্ষাৎকারে 'ভিশন ২০৩০' সম্পর্কিত আলোচনায় এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
কোরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনা ছাড়া শরীয়া আইন বাস্তবায়ন করতে পারেবেন না বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, যখন হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনার কথা আসে তখন দেখা যায়, অধিকাংশ হাদীস লেখকেরা হাদীসকে নিজস্ব পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেছেন যেমন বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্যরা। তবে হাদীসের শ্রেণিকরণের জন্য সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো হাদীসটি কি অনেকের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে নাকি বর্ণনাকারী কেবল একজন? এবং শরীয়া ভিত্তিক আইন হিসেবে গ্রহণের জন্য এটাই মূল সূত্র।
তিনি আরও বলেন, যখন আমরা মুতাওয়াতির হাদীস নিয়ে কথা বলি, এ ধরনের হাদীসগুলো সংখ্যায় কম তবে বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে এই হাদীসগুলোর বিশুদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। এই ধরনের হাদীসগুলো রাসূল সা. থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়ে এসেছে।
আবার আমরা যখন আহাদ হাদীস নিয়ে আলোচনা করি, এটিকেও নানাভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন, দুর্বল, সঠিক ও প্রসিদ্ধ হাদীস। তবে এই হাদীসগুলো মুতাওয়াতির হাদীসের মতো প্রভাবশালী নয়।
পরবর্তীতে তিনি হাদীসের আরেকটি প্রকার “Khabar” হাদীস নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “Khabar” হল এমন হাদীস, যা একজন একক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তির কাছে এসেছে অজানা সূত্রে যেটা হতে পারে সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অথবা একটি দল থেকে একটি দলে, তারপর একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে। ফলে এখানে হাদীসের বর্ণনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে। এই ধরনের হাদীসগুলোর সংখ্যা অনেক হলেও এগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়, এই অর্থে যে এর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং এটি বাধ্যতামূলকও নয়।
হাদিস মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মগ্রন্থ। গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে হাদিসের অবস্থান কুরআনের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআনের ঠিক পরেই।
হাদিস হলো নবী মোহাম্মদের বাণী ও জীবনাচরণ। অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বাস করে যে, কোরআনের মতো হাদিসের প্রতিটি কথা নির্ভুল ও সত্য। তাদের কাছে হাদিসের অসম্ভব গুরুত্বের আরও একটি বড় কারণ রয়েছে। সেটা এ রকম, কোরআনে বহু অস্পষ্ট, অসংলগ্ন ও দ্ব্যর্থবোধক আয়াত আছে যার ব্যাখ্যা হাদিসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
তাছাড়া রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা ও প্রশ্নের উত্তর কোরআনে পাওয়া যায় না, হাদিসে পাওয়া যায়। সে কারণেই বলা হয় যে, ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে মূলত দুটি প্রধান স্তম্ভের ওপর যার একটি কোরআন, আর অন্যটি হাদিস। সৌদি আরবে যে সংবিধান চালু রয়েছে তারও প্রধান ভিত্তি হলো এই দুটি ধর্মগ্রন্থ- কোরআন ও হাদিস। এর অর্থ হলো, মুসলমানদের কাছে কোরআন যতখানি অপরিহার্য, হাদিসও ঠিক ততটাই অপরিহার্য।
চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীদের অপব্যবহার থেকে হাদিসকে রক্ষা করার জন্য হাদিসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চলছে সৌদি আরবজুড়ে। এর পেছনে রয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।